পবিত্র মাহে রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত

পবিত্র মাহে রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর জন্য আমার আজকের এই পোস্টটি লেখা। আপনারা অনুগ্রহ করে আমার এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন এবং পবিত্র মাহে রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। পবিত্র মাহে রমজান মাস সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ পাক বলেন-
شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡهُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ فَمَنۡ شَهِدَ مِنۡکُمُ الشَّهۡرَ فَلۡیَصُمۡهُ

পবিত্র মাহে রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে  বিস্তারিত
এই পবিত্র মাহে রমজান মাসেই পবিত্র আল-কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। আর এই পবিত্র কোরআন মানুষের হেদায়েতের জন্য এবং সুস্পস্ট নির্দেশনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়কারী। সুতরাং  এ মাসটি যখন তোমাদের মাঝে উপস্থিত হবে তখন সে যেন সিয়াম পালন করে অর্থাৎ রোজা রাখে। - সুরা বাকারা : ১৮৫।

ভূমিকা

পবিত্র মাহে রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে  বিস্তারিত আলোচনায় জানা যায় যে, এই মাসে প্রতিটি ইবাদতে আল্লাহ রহমত বর্ষিত হয়, আল্লাহ গুণাহ মাফ করেন। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আল্লাহ রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সওয়াবের আশায় ঈমানের সাথে রমজান মাসের সিয়াম বা রোজা পালন করবে, রাত জেগে নামাজ আদায় করবে, নফল ইবাদত করবে, লায়লাতুল কদরের ইবাদত করবে তার পূর্বের সব গুণাহ মাফ করা হবে। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।

রমজান মাসের ফজিলত 

রমজান মাসের রোজাকে আল্লাহ তায়ালা ফরজ করে দিয়েছেন এবং এর সওয়াব আল্লাহ তায়ালা নিজে প্রদান করবেন। আর এ মাসে যে রোজা রাখবে, নামাজ আদায় করবে, নফল ইবাদত করবে, তাকে এর বিনিময়ে ৭০ গুণ সওয়াব প্রদান করা হবে। যেমন- যদি কেউ এ মাসে নফল ইবাদত করে তাহলে তাকে অন্য মাসের ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব এবং এই মাসে যে ফরজ ইবাদত করবে অন্য মাসের চেয়ে ৭০ গুণ ফরজ ইবাদতের সওয়াব প্রদান করা হবে। 

রমজানের একটি রাত হাজার রাতের চেয়ে উত্তম

এই রমজান মাসের শেষ ১০ দিনে বেজোড় রাতগুলোতে অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজানের দিবসপূর্ব  রাতগুলোর মধ্যে কোন একটি রাত লায়লাতুল কদর রাত। তাই এ রাত খোঁজার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহর রাসুল (সাঃ)। লায়লাতুল কদর কী? লায়লাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। 

এই লায়লাতুল কদর বা কদরের রাত্রিতে ইবাদত করলে এক হাজার মাস ইবাদত করার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। এ রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল আঃ) আল্লাহর অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন। সুখ-শান্তিময় এই রাত্রি ফজর পর্যন্ত নির্ধারিত। (সুরা কাদর- ১-৫)। 

হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, একদিন আল্লাহ রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, যদি আমি লায়তুল কদরের রাত্রি পেয়ে যাই তাহলে আমি কী দোয়া পড়বো। তখন রাসুল (সাঃ) আমাকে বললেন তুমি বলবে- উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি। অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাকারী এবং তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। (সুনানে তিরমিজি : ৩৫১৩)। 

রমজান মাসের গুরুত্ব 

রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস এই রমজান মাস । অন্যান্য মাসের চেয়ে অধিক মর্যাদাপূর্ণ এ মাস। এ মাসের অর্জিত জ্ঞান সকল মাসের মধ্যে প্রয়োগ করে নিজের জীবনকে সুন্দর ও আলোকিত করি। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জীবনে রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক গুণে বেশি।

এই পবিত্র মাসে নিজেকে ইবাদত বন্দেগীর মধ্যে নিমজ্জিত রাখুন এবং পানাহার, পাপাচার, মিথ্যা কথা বলা, ঝগড়া-বিবাদ থেকে নিজেকে বিরত ও সংযত রাখুন সুবেহ-সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। এ মাসে পূর্বের গুণাহর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান এবং ভবিষ্যত জীবন-যাপনের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে এ মাসে বেশী বেশী ইবাদত বন্দেগিতে নিজেকে মশগুল রাখুন।

রমজান মাস তাকওয়া অর্জনের মাস 

আল্লাহ তায়ালা বলেন- হে মুমিনগণ তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমনি করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী প্রত্যেক উম্মতের উপরও। যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (সূরা- বাকারা-১৮৩)। এরই ধারাবাহিকতায় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতের উপরও রোজাকে ফরজ করা হয়েছে। 

রমজান মাসে সেহরী ও তারাবির সালাত 

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন রাসুল (সাঃ) কে রমজান মাস সম্পর্কে বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে  সওয়াব লাভের আশায়  তারাবির সালাত আদায় করবে তা পূর্ববর্তী সকল গুণাহ মাফ করে দেয়া হবে- (বুখারি : ১৮৮২) এবং সাহরি খাওয়ার বিষয়ে হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একদা রাসুল্লাহ (সাঃ) বলেন- তোমরা সাহরি খাও, কেননা সাহরিতে অনেক বরকত রয়েছে। 

রমজান মাসে ইফতার করা ও অন্যকে করানো

হযরত সালমান ফারসি (রাঃ) হতে বর্ণিত- রাসুল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি  রমজান মাসে কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুণাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে এবং ঐ রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব  সে পাবে, তবে রোজাদারের সওয়াবের কোন ঘাটতি হবে না। আরো বলেছেন- বেশি বেশি তাওবা ইস্তিগফার পড়তে। 

৩ ব্যক্তির দোয়া কবুলের কথা হাদিসে উল্লেখ্য আছে- এর মধ্যে একটি হলো ইফতারের পূর্বমূহুর্তে রোজাদারের দোয়া। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি দোয়া করার তাগিদ দিয়েছেন। আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করা যায় যখন বেশি বেশি দোয়া করা হয়। এ ব্যাপারে সুরা মুমিনের ৬০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন আমার কাছে দোয়া করো, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো। 

গুণাহ কম হয় রমজান মাসে, পূণ্যের কাজে অংশগ্রহণ বেড়ে যায়, শান্তির সুবাত বইতে থাকে চারদিকে, যার ফলে সবার হৃদয়ে ও মনে ইবাদত ইবাদত মনোভাব থাকে। রমজান মাসে সাহরি, ইফতার, তারাবি ও তাহাজ্জুদের দ্বারা দোয়া কবুল হয়। 

রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াত 

পবিত্র মাহে রমজান মাসে পবিত্র আল-কোরআন মজিদ নাজিল হয়েছে। তাই এ মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী যেন এই মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলওয়াত করে, ইস্তিগফার পড়বে, নফল ইবাদত করবে- কেননা এ মাস রহমতের মাস ও দোয়া কবুলের মাস। 

রমজান মাসে দান সাদকাহ করা

অন্যান্য মাসের চেয়ে যেহেতু এ মাসে ৭০ গুণ সওয়াব বেশি তাই এ মাসে বেশি বেশি দান-সাদকাহ করতে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। দান-সাদকার হাতকে বাড়িয়ে দিতে বলেছেন। রমজান মাসে রোজা পালনের মাধ্যমে দানশীল হওয়া ও আল্লাহর পথে নিজে ব্যয় করবে এবং অন্যকে দান-সাদকাহ ও আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য উৎসাহ প্রদান করবেন। 

শেষ কথা

পবিত্র মাহে রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত লেখে শেষ করা যাবে না। এই মাসের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। তাই  প্রত্যেক মুসলিম নর-নারির জীবনে রমজান মাস আসলে  সকল ইবাদত পুরিপূর্ণভাবে পালন করবেন। কেননা এই মাস দোয়া কবুলের মাস। ইবাদত বন্দেগী ও দোয়ার মাধ্যমে জীবনের সকল গুণাহ আল্লাহর কাছে মাফ করে নিতে পারবেন। নিজের পাপের জন্য অনুশোচনা করে আল্লাহ কাছে ক্ষমা চাইবেন। আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দিবেন। আমাদেরক সকলকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিক এই  দোয়া করি-আমিন। 

লেখকের মন্তব্য

যদি আমার এই পোস্টটি সস্পূর্ণ  পড়ে আপনাদের ভালো লেগে থাকে কিংবা কোন উপকারে আসে তাহলে আমার এই সাইটটি ভিজিট করুন এবং অন্যকে শেয়ার করে জানিয়ে দিন। আর এই সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করলে  আরো অনেক তথ্য পাবেন- ইনশাআল্লাহ। 

যাযাকাল্লাহ খায়রান। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url